প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা- ঘরোয়া স্বাস্থ্য সেবা
১। কেউ বিষাক্ত কিছু খেয়ে ফেললে তাকে বমি করানোর চেষ্টা করুন।
এজন্য বেশি করে লবণ গুলানো পানি খাওয়াতে পারেন এবং দ্রুত হাসপাতালের দ্বারস্থ হওয়া প্রয়োজন।
২। বিষাক্ত পোকার কামড়ের স্থানে বরফ দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং ক্ষত স্থানে এন্টিসেপটিক লোশন প্রয়োগ করুন।
সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে দাঁতের দাগ দেখে চিনতে চেষ্টা করতে হবে, সাপটি বিষাক্ত কি না।
বিষধর সাপের ক্ষেত্রে দুই সারি দাঁতের দাগের বাইরে আরো দুটি দাগ দেখা যাবে।
সাপের কামড়ের কয়েক ইঞ্চি উপরে কাপড় বা রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিতে হবে যাতে রক্ত চলাচল কমে যায়।
প্রয়োজনে সাপের কামড়ের স্থানে কেটে নিয়ে রক্ত শুষে ফেলতে হবে_ তবে পদ্ধতিটি অবশ্যই শিখে নিতে হবে।
৩। শরীরের কোথাও কেটে রক্ত পড়তে থাকলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা বা রক্তপাত কমানোই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া দরকার।
পরিষ্কার গজ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরুন। হাতে কেটে গেলে হাত কিছুক্ষণ উঁচু করে ধরুন।
এতে রক্তক্ষরণ কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে আসবে। অতঃপর বিটাডিন বা এন্টিসেপটিক দিয়ে ওই স্থান পরিষ্কার করে এন্টিবায়োটিক ক্রিম লাগিয়ে ড্রেসিং করুন।
রক্ত বন্ধ না হলে বা সেলাই প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
ড্রেসিং এ কাজ হলে একদিন পরপর ওষুধ নতুন করে লাগান।
৪। শরীরের কোথাও কোন আঘাত পেলে প্রথমেই আঘাতের স্থান ও পরিমাণ নিরূপণ করুন।
হাতে বা পায়ে ফুলে গেলে সেখানে বরফ সেঁক দিন। ডাইক্লোফেনাক জেল হালকা করে লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
তবে কোথাও কেটে গেলে ওই ক্ষতের ওপর সরাসরি এ রকম ক্রিম লাগাবেন না। আক্রান্ত স্থান ম্যাসাজ করবেন না।
আক্রান্ত স্থান বিশ্রামে রাখুন। ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন।
তবে অতিরিক্ত ফুলে গেলে বা চামড়ার নিচে কালো হয়ে গেলে হাড়টি ভেঙেছে ধরে নেয়া যায়।
সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এক্স-রে করে নিশ্চিত হোন ও যথাযথ চিকিৎসা নিন।
৫। আর আঘাত যদি মাথায় হয় তাহলে সতর্ক থাকা উচিত। আঘাতের পর বমি, অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, প্রচণ্ড মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। বাড়িতে রাখা একটি Fast Aid Box এবং বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান আপনাকে সাহায্য করবে ছোটখাটো মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি সামলানোর জন্য। এতে জীবন হবে অনেক নিরাপদ।
৬। কানে পোকামাকড় ঢুকে গেলে সরিষার তেল বা অলিভ ওয়েল অল্প পরিমাণ ঢেলে দিলে পোকা মরে যায় এবং বের হয়ে আসে।
তাছাড়া মার্বেল জাতীয় কোনো কিছু ঢুকে গেলে নড়াচড়া না করে দ্রুত ডাক্তারের নিকট বা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭। চোখ মানুষের অমূল্য সম্পদ। নানা কারণে চোখ দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে।
চোখে ধুলোবালি পড়তে পারে।
কাজ করার সময় কিছু ছিটকে এসে চোখে বিঁধতে পারে, কোনো রাসায়নিক পদার্থ চোখে পড়তে পারে।
এরূপ কিছু চোখে পড়ে গেলে -
a। কখনই চোখ কচলানো যাবে না।
b। চোখে পানির ঝাপটা দিতে হবে।
c। রোগীকে আলোর দিকে মুখ করে বসিয়ে আলতোভাবে চোখের দুটি পাতা খুলে দেখতে হবে। চোখে কোনো বস্তু লেগে থাকলে রুমালের কোনা ভিজিয়ে আলতোভাবে ব্রাশ করার মতো লাগিয়ে বস্তুটি তুলে নিতে হবে।
d। রাসায়নিক কিছু চোখে পড়লে দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
e। তাড়াতাড়ি ডাক্তার বা হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। দেহের স্নায়ুতন্ত্রের কাজের বিঘ্ন ঘটলে রোগীর জ্ঞান লুপ্ত হয়ে যায়। এ অবস্থাকে অজ্ঞান বা অচেতন অবস্থা বলে। বিভিন্ন কারণে মানুষ অজ্ঞান হয় যেমন- রোগবশত, দুর্ঘটনাজনিত, বিষক্রিয়াজনিত এবং তাপের তারতম্যজনিত কারণে।
a। রোগীকে ফাঁকা ও বায়ুপূর্ণ স্থানে নিয়ে যেতে হবে।
b। রোগীর জামা-কাপড়, জুতা, মোজা, কৃত্রিম দাঁত থাকলে খুলে নিতে হবে।
c। রোগীকে চিৎ করে শুইয়ে পর্যবেক্ষণ করে কী করণীয় তা স্থির করতে হবে।
d। লোক বেশি হলে সরাতে হবে।
e। রক্তক্ষরণ হলে তার প্রতিবিধান করতে হবে।
f। কোনো উত্তেজক পানীয় বা খাদ্য খাওয়ানো যাবে না।
g। বিষজনিত কারণে অজ্ঞান হলে রোগীকে উপুড়করে বুকের নিচে বালিশ দিয়ে শুইয়ে দিতে হবে। রোগীর দুটি পা হাঁটু হতে উপরের দিকে ভাঁজ করে দিতে হবে।
h। জ্ঞান ফেরার জন্য মুখে পানির ঝাপটা দিতে হবে। গরম চা বা কফি খাওয়াতে হবে।
i। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
৯। হাড়ের সংযোগ স্থান সঞ্চালনের সময় হঠাৎ মচকে গেলে বা বেঁকে গেলে সংযোগ স্থান সংলগ্ন স্নায়ুতন্ত্রের ওপর টান পড়ে বা ছিঁড়ে গিয়ে যে অসুবিধার সৃষ্টি হয় তাকে মচকানো বলে। ব্যায়াম, পর্বধুলা বা অন্যান্য কাজকর্মের সময় মাঝে মাঝে ব্যথা পাওয়া বা মচকানো অস্বাভাবিক নয়। এসব দুর্ঘটনার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু অনেক সময় চিকিৎসকের সাহায্য পেতে দেরি হয়। তাই আহত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসার দরকার হয়।
লক্ষণ : ----
a। আহত স্থানে ব্যথা অনুভূত হবে।b। সন্ধিস্থল ফুলে যাবে।
c। আহত স্থান বিবর্ণ হয়ে নীল বা লাল আকার ধারণ করবে।
d। স্বাভাবিক ভাবে নড়াচড়া করা যাবে নাএবং চলার সময় আহত স্থানে ব্যথা বৃদ্ধিপাবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা : ------------
a। আঘাতের সাথে সাথে আহত স্থানে ঠাণ্ডা পানি বা বরফ লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।b। আহত স্থানটি নড়াচড়া করতে দেয়া যাবে না।
c। মচকানো স্থানটি যথাসম্ভব আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে।
d। আহত স্থানে হাড়ভাঙার ব্যাণ্ডেজ প্রয়োগ করতে হবে।
e। ব্যাণ্ডেজ সব সময় ভিজা রাখবে। সম্ভব হলে বরফ লাগাবে।
f। মাংসপেশি মচকে গেলে রোগীকে সহজ ও আরামদায়ক অবস্থায় শোয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
g। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে ডাক্তার বা হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০। রক্ত হলো এক প্রকার তরল পদার্থ।
এর রং লাল।
হিমোগ্লোবিন নামক লাল রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতিতে রক্তের রং লাল দেখায়।
শরীরের কোনো স্থানে আঘাতের ফলে বা কেটে গেলে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, এবং সেই ক্ষত হতে যে রক্ত বের হয়, তাকে রক্তক্ষরণ বা রক্তপাত বলে। বিভিন্নভাবে রক্তক্ষরণ হতে পারে যেমন-
মুখ দিয়ে রক্ত পড়া :
মুখের ভিতরের যেকোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে বরফ চুষতে হবে। তাহলে রক্তপাত বন্ধ হবে। এরপর রোগীকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে।নাক দিয়ে রক্ত পড়া :
আঘাতজনিত বা অন্য কোনো কারণে কারো নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলে তৎক্ষণাৎ তাকে চিত করে শোয়াতে হবে অথবা বসিয়ে মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে রাখতে হবে। কাপড়চোপড় ঢিলা করে দিতে হবে। নাকের সামনে ও ঘাড়ের পিছনে ঠাণ্ডা কমপ্রেস দিতে হবে। তখন মুখ দিয়ে শ্বাসকার্য চালাতে হবে। রক্তপাত বন্ধ হবার পরও কিছুক্ষণ নাকের ছিদ্রপথে তুলো দিয়ে রাখতে হবে।শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে
কাটা স্থানটি কিছুক্ষণ পরিষ্কার হাতে চেপে ধরতে হবে। রক্ত বন্ধ হলে ব্যাণ্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে। সাধারণত তিনটি উৎস থেকে রক্তপাত হয়। যথা-ক) কৈশিক নালি (Capillary)-একটানা স্রোতের ন্যায় রক্ত বের হয়।
খ) শিরা (Vein)-গলগল করে রক্ত বের হয় ।
গ) ধমনী (Artery)- ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়।
দুর্ঘটনায় বেশির ভাগ রক্তপাত হয় কৈশিক নালি থেকে।
শরীরে কোনো বস্তু ঢুকে রক্তপাত হলে যা করবেন
- ক্ষতস্থানের দুই পাশ চেপে ধরুন (তবে ক্ষতস্থানের ওপর চাপ দেবেন না)।- ক্ষতস্থান ও বস্তুটির ওপর আলতো করে গজ বা কাপড় মুড়িয়ে দিন।
- বস্তুটির চারদিকে ক্ষতস্থানের ওপর প্যাড ব্যবহার করে ব্যান্ডেজ বাঁধুন। ক্ষতস্থান থেকে বস্তুটি তুলে ফেলার চেষ্টা করবেন না।
- হাত বা পায়ের ক্ষেৎরে ক্ষত অঙ্গ উঁচু করে ধরুন।
- যদি মনে হয়, আঘাতপ্রাপ্ত অঙ্গের হাড় ভেঙে গেছে; তাহলে অঙ্গটি নড়াচড়া বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করুন।
- হাত বা পায়ের ক্ষেৎরে ঘন ঘন আঙুল ও পায়ের পাতা উষ্ণ আছে কিনা পরীক্ষা করুন।
রক্তপাতের প্রাথমিক চিকিৎসা :-..................
a। রোগীকে বসানো ও শোয়ানো যায় এমন স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। এতে রক্তপাত আপনা-আপনি কমে যাবে।b। যে স্থান হতে রক্তপাত হচ্ছে, সে স্থান হৃৎপিণ্ডের সমতার উপর তুলে ধরলে রক্তপাত অনেকটা কমে যাবে।
c। সামান্য কেটে গেলে ঐ স্থানে রক্ত জমাটবেঁধে আপনা-আপনি রক্তপাত বন্ধ হয়।
d। কাটা স্থানে বৃদ্ধাঙ্গুলির চাপ প্রয়োগ করলে অনেক সময় রক্তপাত বন্ধ হয়।
e। আহত অঙ্গের নড়াচড়া বন্ধ করতে হবে।
f। রক্তপাতের স্থানে বরফ ব্যবহার করতে হবে।
g। রক্তপাত বন্ধের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ দিতে হবে।
h। ক্ষতস্থান পরিষ্কার কাপড় বা ব্যাণ্ডেজ দিয়ে বাঁধতে হবে।
i। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নিতে হবে।
j। বেশি রক্তপাত হলে টুর্নিকেট ব্যবহার করতে হবে। টুর্নিকেটঅর্থ হলো প্রাথমিক বাঁধনকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শক্ত করে তোলা। ক্ষতস্থান ঢিলা করে বেঁধে তার ভিতরে একটি কাঠি বা পেন্সিল ঢুকিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুরালে বাঁধনটি ক্রমশ শক্ত হয়ে রক্তপাত বন্ধ হয়।
0 Comments