অতনু আর নীলাঞ্জনা...Bangla Premer Golpo
দশ মাসের সংসার জীবনের মধ্যে প্রথম দুই মাস মধুময় ছিল। ধীরে ধীরে অজানা দ্বন্দ্ব আর অর্থহীন ভুল বোঝাবুঝি( হয়তো মনে বাসা বাঁধা না মানা জ্যোতিষবিধান) গ্রাস করলো প্রেম কে।
আজ তারা দুজনেই কোর্টে একে অপরকে দেওয়া মিউচুয়াল ডিভোর্সের ফাইলে সই করলো। শেষে দুজনেই কোর্টের গেটে পৃথক গন্তব্যের বাসের জন্য অপেক্ষারত। কাছেই কোথাও সেচ্ছায় রক্তদান শিবির হচ্ছে। মাইকে একের পর এক রবীন্দ্র সঙ্গীত বেজে চলেছে ... দুজনের কাছেই আজ যেন সেই প্রিয় গান গুলি বড্ড অস্বস্তিকর।
এমনি সময়ে বছর আশির এক অশীতিপর বৃদ্ধ এসে নীলাঞ্জনা কে বলল - মা , দুটো পয়সা দেবে? বউ টা দুই দিন হলো কিছু খায়নি...বিশ্বাস করো মা....আমার খিদে লাগেনা...কিন্তু ওর খিদে টা আমি সইতে পারিনা কিছুতেই।
এই শুনে অতনু বলল - আপনার বাড়ি কোথায়?
বৃদ্ধ বললেন - বাড়ি হালিশহর বাবা! তিন দিন আগে, ছেলে আর বউমা ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। ট্রেন চেপে কলকাতায় এসেছি। যদি কোন কাজ পাই। বুড়ো মানুষ বলে কেউ কাজ দিচ্ছে না...বাবা। এদিকে পকেটে যে কটা সামান্য টাকা ছিল সব শেষ। দুই দিন ঐ গাছতলাতেই আছি। দেবে বাবা..!কটা টাকা..? বেশী না দশ টা টাকা দিলেই হবে।
বৃত্তান্ত শুনে নীলাঞ্জনা ছুটে গিয়ে বেশ কটা কচুরি আর তরকারি কিনে ঐ গাছ তলায় বৃদ্ধার কাছে গেল। সঙ্গে বৃদ্ধ আর এক বোতল নতুন জলের বোতল হাতে অতনু।
নীলাঞ্জনা আর অতনু ঠায় দাঁড়িয়ে। হাঁ করে দেখছে অমূল্য প্রেমের ইতি কথা...
দুজনেই তাদের কাঁপা কাঁপা হাতে দুজন কে খাইয়ে দিতে ব্যস্ত। একজন আঁচল দিয়ে অন্য জনের ঘাম মুছিয়ে দেয়,তো আরেকজন আরেকজনের ধরে জল খাইয়ে দেয়। পথে ধারের বটবৃক্ষতলে যেন অকাল প্রেমের স্বর্গ নেমে এসেছে...
অতনু ওর চেনা এক বন্ধুর মারফত একটা বৃদ্ধাশ্রমে ফোনে যোগাযোগ করলো। ট্যাক্সি নিয়ে দুজনে মিলে বৃদ্ধ দম্পতিকে নিয়ে ঐ বৃদ্ধাশ্রমের উদ্দেশে রওনা হলো। অতনু আর নীলাঞ্জনা এত কর্মকাণ্ডের মধ্যে ভুলেই গেছে যে একটু আগেই ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। অবশেষে তারা "শেষের খেয়া" নামক বৃদ্ধাশ্রমে এসে পৌছালো। দুই বৃদ্ধ- বৃদ্ধাকে নিজেদের দায়িত্বে সেখানে স্থিত করার পর ওরা যখন বেরোতে যাবে...সেই বৃদ্ধ টি হেসে বললেন - অনেক অনেক বছর এভাবেই একসঙ্গে থেকো তোমরা ... খুব আর খুব খুশি তে থেকো বাবা !!...খুব ভালো থেকো মা..!!
বৃদ্ধাশ্রমের বাইরেও কাছেই কোথাও ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প চলছে...যথারীতি এখানেও সেই রবি ঠাকুরের গান ই বাজছে।।
অতনু, নীলাঞ্জনা কে বলল - বলছি ডিভোর্সের পর সেই বউকে যদি না ছাড়তে চাই তাহলে কি আবার নতুন করে বিয়ে করতে হবে?
নীলাঞ্জনা - আইন তো তাই বলে শুনেছি।
অতনু - যাবে নাকি ?
নীলাঞ্জনা - কোথায়?
অতনু - রেজিস্ট্রি অফিসে !
কেঁদে জড়িয়ে ধরলো অতনু কে....কাঁদতে কাঁদতে কাঁপা কাঁপা গলায় অতনুর সাদা শার্ট টা খামচে বলল - এখন একমাস তো নোটিশ দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। থাকবো কোথায়?
অতনু আলতো করে নীলাঞ্জনার মুখটা তুলে বলল - নিজের বউ কে নিয়ে নয় একটা মাস লিভ টুগেদার ই করলাম। কি...! আপত্তি নেই তো..!
নীলাঞ্জনা - আর তোমার জ্যোতিষ মামা?
অতনু - আরে ধুর, মামা তো বলেইনি যে আমার দুই খানা বিয়ে আছে। তাই ঐ বিধান এমনিও মানি না ।
অতনু আর নীলাঞ্জনা ট্যাক্সি ডেকে রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়ার জন্য উঠে বসলো। ট্যাক্সি স্টার্ট দিলো...ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের থেকে ভেসে আসছে শ্রীকান্ত আচার্যের গাওয়া গান টা ...
"" চির সখা...হে...
ছেড়ো...না....মোরে....ছেড়ো ....না...""
#collected
0 Comments