অনুগল্প।
গোলাপি হুল।
সঞ্জীব চক্রবর্তী।
বাঁকুড়া।
গুমোট গরম।খা খা দুপুর।হাস ফাস অবস্থা।তাপমাত্রা 50 ডিগ্রি ছুইছুই।ঘর্মাক্ত কলেবরে নিজের চেয়ার টায় ফিরে এল অসীম।সকাল সাত টায় ভাত খেয়ে বার হয় আর লাঞ্চের সময় বাড়ির দেওয়া আলুর চচরি আর রুটি,কোন কোনোদিন একটু অন্য রকম।সাথে একটু সুজির হালুয়া।যাতে মিষ্টি নেই বললেই হয়।ডিউটি শেষে সন্ধ্যা সাত টায় বাদুড় ঝোলা হয়ে বাড়ি ফেরা।সকাল থেকে উদয়স্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম।তবু জীবনে নেই স্থিরতা,নেই শান্তি। মাস মাইনের প্রায় সমস্ত টাকাই সে পারমিতার।হাতে তুলে দেয়।সে সুধুরাখে বাস ভাড়ার টাকা টা। সংসারের সমস্ত দায় দায়িত্ব পারমিতার উপরেই ছেড়ে দিয়েছে।সে তার নিজের ইচ্ছামত টাকা খরচ করে।একদিনের জন্য ও অসীম জানতে
চায়নি কোথায় কত খরচ?সে নিজের সব শখ আল্হাদ কবেই বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে।কারন তার হাতে বাড়তি টাকা থাকে না।
তবুআজ ও সে পারমিতার মন জয় করতে পারল না।সংসার সুখি হয় রমণীর গুনে।কিন্তুতার সংসারে সুখ নেই।
প্যাচ পেচে গরম।সেই আদ্যি কালের পাখা,হাওয়ার থেকে ঘরর ঘরর শব্দ টাই বেশি হয়।বড়বাবু কে অনেকবার বলে ও পাখা চেঞ্জ করাতে পারে নি।রুমাল দিয়ে ঘাম মোছার ফাকে ফাকে এই ফাইল,সে ফাইল টেনে টেনে কিছুক্ষণ কাজ করে নিল।তারপর সে সব যথা স্থানে রেখে চোখ বুঝে ঘাড় টাকে চেয়ার এ এলিয়ে দিল অসীম।দুপুরের এই সময় টুকু ই তার বিশ্রামের অবসর।গ্রীষ্ম কালের এই সময় টায় খাবার খাওয়ার পর বড্ড ঘুম আসে।
চোখ বুঝে অসীম ভাবতে লাগল,তার বৌ পারমিতা কি চায়?তার যে কিছুতেই সন্তুষ্টি নেই।আর ও চাই,আর ও চাই।
তার যে চাওয়ার কোন শেষ নেই।
কিন্তু সে তো একজন সামান্য ক্লার্ক।সে যা বেতন পায় তাতে চার জনের একটা ফ্যামিলি স্বচ্ছন্দে চলতে পারে।কিন্তু পারমিতার যেন বিলা সীতার অন্ত নেই।যা তার মত একজন চাকুরের পক্ষ্যে মেটানো সম্ভব নয়।পারমিতা কে এটা বোঝালেও সে বোঝে না।
আসলে যারা অন্যের দেখে ঈর্ষণনীৎ হয়,তাদের চাহিদা কোনোদিন ই মেটার নয়।
অথচ,পারমিতা আগে এরকম ছিল না।বিয়ের সাত বছর আগের থেকে সে পারমিতা কে দেখছে। তাদের ভাল বাসার সেই স্বপ্ন ময় দিন গুলোর কথা,স্মর নিয় মুহুর্ত গুলো এখনো অসীমের মনে গাথা হয়ে আছে।পারমিতা ছিল প্রচন্ড সংস্কার পন্থী,উদার,নীরা শক্ত,আখাঙ্ক্ষ হীন মেয়ে।যে অন্যের দুঃখ সহ্য্য করতে পারত না।যার ছিল না বস্তু গত লোভ।
পারমিতা কোন দিন ই উত্সবের আতিসজ্যে ভেসে যেত না।আবার সংস্কার ও শিক্ষার প্রতি ছিল অটুট আস্থাবান।বিয়ের আগে চুমু
খাওয়াতে ও তার ছিল প্রবল আপত্তি।চুমু খেতে চাইলে বলত,-বিয়ের আগে ঐ সব একদম না।যদি বাচ্চা এসে যায়?
এই রকম ছিল পারমিতা।যে মেয়ে ভালো বাসার শালি নতা ও মর্যাদা দিতে জানত।যার মধ্যে ছিল নিষ্পাপ সরলতা ও সুকৌসলে মনের আবেগ কে দমন করার সহজাত ক্ষমতা।আর যে কারনে অসীম তাকে প্রায় পাগলের মত ভালো বেসেছিল।
সেই পারমিতা!আর আজকের পারমিতা! না, আজকাল অসীম কিছুতেই মেলাতে পারে না।সে দিনের সেই শান্ত স্নিগ্ধ মেয়েটি,আর এখন কার তার স্ত্রী বা মহিলা পারমিতা কে সে কিছুতেই একাসনে বসাতে পারে না।আজকের পারমিতা কথায় কথায় উগ্র।কল তলার ঝগড়ার মত বাক্যবাণ।দুনিয়ার সব কিছু কে করায়ত্ত করার অদম্য জেদ।
অসীম হাপিযে উঠেছে। একবার করে ভাবে,শত সহস্র বছর আগের একটা উক্তি-নারিনাঙ চরিত্রা নং দেবা ন জাননতি।কথাটি কত খানি সত্য।কারন অসীমের এত দিনের বিশ্বাস,অনুধাবন ও বিশ্লেসন আজ মিথ্যায় পর্য বসিত।তার কাছে সে দিনের সুবাসিত গোলাপ
আজ কাঁটা গোলাপ।যা তাকে প্রতি নিয়ত হুল ফুটিয়ে ক্ষত বিক্ষত ও রক্তাক্ত করে তুলছে।
0 Comments