প্রাক্তন (আমার প্রথম লেখা গল্প) সুব্রত পাল




প্রাক্তন (আমার প্রথম লেখা গল্প) সুব্রত পাল 

আজ থেকে প্রায় কয়েক বছর আগে আমি তোমার সবথেকে প্রিয় মানুষ ছিলাম। তোমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত একজন বন্ধু ছিলাম। তুমি বলতে আমাকে নাকি তুমি ভাগ্য করে পেয়েছো। আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষ। আগের মতো আর আবেগ নেই। কল্পনা করতে পারি না। আসলে বাস্তব কে দেখে ঠকতে ঠকতে অনেক কিছু শিখেছি। তোমাকে ও আমার মনে পড়ে না। মনে পড়লেও আমি এখন বুঝতে শিখেছি তুমি আমার প্রাক্তন, তুমি আমার অতীত। তাই এই সব ই এখন গল্পের পাতায়। হঠাৎ ফেইসবুক করতে করতে একটা ছবি ভেসে উঠলো। মনে হলো খুব চেনা চেনা লাগছে। হতে পারে তোমাকে যাতে না চিনতে পারি তার একটা সুনিপুণ কৌশল। ছবিটা অনেকক্ষন ধরে দেখছিলাম যাতে আমার ধারণা টা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু যত বার ই দেখছিলাম ততবার ই আমার ধারণার ভিতটা মজবুত হচ্ছিল অবশেষে আমার ধারণা টা সত্যি হলো। আমাদের একসাথে কাটানো সময় গুলো খুব মনে পড়ছিলো। তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। তুমি বলেছিলে আমরা অনেক দূরে গিয়ে একটা সুন্দর ঘর বানাবো। আমি অফিস থেকে ফিরে ডাকবো কই গো শুনছো! তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি নাকি আমাকে ছাড়া বাঁচতেই পারবে না। আমি ছাড়া তুমি কিছু ভাবতেই পারো না।কথা গুলো খুব মনে পড়ছিলো। বিশ্বাস করো একজন পরস্ত্রী র সম্পর্কে এই সব ভাবতে আমার আজ বিবেকে বাঁধছে। তবু স্বার্থের মন একটু অনুভূতি নিয়ে সুখের সাগরে যেতে চাইছিলো যা বারবার আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। আমাকে একবার দেখতে না পেলে তোমার অভিমান আমাকে ভয়ার্ত দেখাতো। তোমার মনে আছে আমাকে বলেছিলে পৃথিবী উল্টে গেলেও নাকি তুমি আমার সাথে থাকবে। ততক্ষণে ফেইসবুকের অনেক ভিতরে ঢুকে গেছি। একবার ফেইসবুক কে জিজ্ঞাসা করলাম আর একটু দেখাতে পারবে? দেখছি লাল টকটকে একটা শাড়ি পরে একটা ছেলের পাশে তুমি পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো। আমি যত দেখছিলাম তত অবাক হচ্ছিলাম। ততক্ষণে বুঝে গেছি পল্লবী বিয়ে করে নিয়েছে।হাতে শাঁখা, কপালে সিঁদুরের ছাপ তোমাকে একটু বেশি বয়সের দেখালেও খারাপ লাগে নি। একটার পর একটা তোমার ছবি আমি দেখেই চলেছি।এক জায়গায় লেখা ছিল আমার স্বপ্নে দেখা পুরুষ। যাইহোক তুমি যে বিয়ে করে নিয়েছো এটা নিশ্চিত হলাম। আমার সাথে শেষ কবে দেখা হয়েছিল জানি না তোমার মনে আছে কিনা। তবে আমার মনে আছে। তুমি আমাকে সকাল দশটায় দেখা করতে বলেছিলে। জানি না তুমি কতক্ষণ অপেক্ষা করেছিলে। তবে এটা জানি আমার আসতে এক ঘন্টা দেরি হয়েছিল। ততক্ষনে তুমি ছিলে না। আসলে রাস্তায় এক মহিলা মাথা ঘুরে পরে যান। তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিতেই এই দেরি।পরে তোমাকে অনেক ফোন করেছিলাম কিন্তু প্রত্যেকবারই এক মহিলা বলছিলেন ফোন টা সুইচ অফ আছে। তোমার মনে অবিশ্বাসের বীজ বড়ো হতে শুরু করেছে। অভিমান করেছিলে বুঝতে পেরেছিলাম। কোনো মতে বন্ধু কে দিয়ে একদিন দেখা করার অনুরোধ করলাম। তুমি প্রত্যাখ্যান করেছিলে।আর যেদিন তুমি নিজে থেকে থেকে দেখা করতে চাইলে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাইলাম না। কারণ? সেটা আজ বলবো। আমাদের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেড়ে গেলো। তুমি আসতে আসতে ভুলতে শুরু করলে।আর আমি আসতে আসতে ভুলতে বাধ্য হলাম। আমার বোনের বিয়ে ঠিক হলো।পাত্র একজন সরকারি কর্মকর্তা। আমি বাবার একমাত্র ছেলে। বাবা শারীরিক সক্ষম নন। দাদা হিসাবে নয়, আমার বোনের বাবা হিসাবে আমি ওদের দাবি মতো এক লাখ টাকা দিতে রাজি হলাম। কারণ আমি বোনকে ভালো দেখতে চেয়েছিলাম। এটা সব দাদাই চায়।এক মাসের মধ্যে বিয়ে হবে। কোথায় টাকা পাবো বুঝতে পারছি না। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি একটা কাগজের বিজ্ঞাপন। কিডনি চাই। দেরি না করে চলে গেলাম।১৫ দিন। জন্য বাড়িতে বলে গিয়েছিলাম একটি ট্রেনিং এ যাচ্ছি। সুস্থ হয়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বোনের বিয়ে হয়ে গেলো। আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করতে চাই নি। কারণ তুমি ও তো কারোর বোন। তোমাকে দূর থেকে দেখতাম। একদিন শহর ছেড়ে কোলকাতায় পড়তে গেলে। তারপর আর কিছু জানি না। হঠাৎ ফেইসবুকে তোমার ছবি দেখলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না তুমি আমার প্রাক্তন। তুমি আমার ভালোবাসা। যাইহোক তুমি যে ভালো আছো এটা দেখে ভালো লাগলো। তোমার ছেলে টি খুব মিষ্টি হয়েছে। তুমি সুখী হও। মাঝে মাঝে তোমার কথা গুলো মনে পড়ে।আর আমি তখন লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তুমি বলতে, তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচবে না।আর আজ আমি বলি মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে,সবারে মাঝে আমি বাঁচিতে চায়। এখন তুমি একজনের মা, একজনের স্ত্রী। সেই সঙ্গে আমার প্রাক্তন।


Friends if you like this post,kindly comment bellow and do share your responce.Thank You for Visiting

Post a Comment

0 Comments