নারীর মানসিক স্বাস্থ্য ও সচেতনতা
স্বাস্থ্যের
কথা বললে আমরা অনেকেই শুধু শারীরিক সুস্থতাকেই বুঝি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা
সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোরই
প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের সমাজে এখনো নারীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতার বেশ
ঘাটতি রয়েছে, যার
ফলে অনেক বিষয়েই আমরা এখনো পিছিয়ে। এসব সমস্যা নিরসনে যত দ্রুত সম্ভব সমাজে নারীর
অধিকার যথার্থভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি এক্ষেত্রে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থভাবে
বাঁচার অধিকার সবারই রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের
দেশের পুরুষদের তুলনায় নারীরা স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়ে সাধারণত গুরুত্ব পেয়ে
থাকে, আর
মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে এটি প্রকটভাবে দেখা যায়। একজন নারী তার জীবনের বিভিন্ন
পর্যায়ে এমন অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, যা
নিয়ে তিনি হয়তো কথাই বলতে বিব্রত বোধ করেন। আবার হয়তো জিইয়ে রাখা এমন কিছু রোগে
ভোগেন, যা
জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। নারী-পুরুষ সবারই অনেক যত্ন নেয়া প্রয়োজন। তবে নারীর
ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের ধরন পুরুষের থেকে কিছুটা ভিন্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে
দুই কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছে এবং প্রাপ্তবয়স্ক
জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৮ শতাংশের বেশি বিষণ্নতায় আক্রান্ত যাদের বেশির ভাগই নারী।
আমাদের সমাজে নারীরা শারীরিক অসুস্থতা, অপর্যাপ্ত ঘুম, সাংসারিক
কাজ, যৌন
নির্যাতন, ইভটিজিং, পারিবারিক
নির্যাতনসহ নানা ধরনের মানসিক চাপে থাকেন। আবার মেনোপজ, গর্ভকালীন
বিষণ্নতা, বয়ঃসন্ধিক্ষণসহ
কিছু প্রাকৃতিক নিয়মের কারণেও নারীরা বিষণ্নতা, হতাশা, কাজে
অনীহাসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। অথচ অনেকেই এগুলোকে অসুস্থতা বলে
গণ্য করতে নারাজ। তাদের মতে, এগুলো খুবই স্বাভাবিক
ব্যাপার এবং কম-বেশি সব নারীকেই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু আসলে মানসিক সুস্থতা
যে দেহের সার্বিক সুস্থ তার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে তা অনেকেরই অজানা। আমাদের সমাজে
নারীরা মন খুলে তার মানসিক অবস্থার বিষয়ে কথা বলতে পারে না। অথচ মন খুলে কথা বলতে
পারলে আর কাউন্সেলিং নেয়ার সুযোগ পেলে নারীদের অনেক মানসিক সমস্যাই কাটিয়ে ওঠা
সম্ভব। আজকাল সবকিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করা, হঠাৎ
আতঙ্কবোধ করা (প্যানিক), ভয় পাওয়া, বুক
ধড়ফড় করা, মাথায়
অস্বস্তি ইত্যাদি।
0 Comments