শবদাহ করা হয় কেন?
কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তাকে আগুনে দাহ করার প্রথা আছে। চুড়ামণি উপনিষদে বলা হয়েছে যে, ব্রহ্মার থেকেই আত্মার উৎপত্তি। আত্মা থেকে আকাশ, আকাশ থেকে বায়ু, বায়ু থেকে অগ্নি, অগ্নি থেকে জল, জল থেকে পৃথিবীর উৎপত্তি হয়েছে। এই পাঁচটি বস্তু মিলে মানুষের শরীর তৈরী। হিন্দুরা
মৃতব্যক্তিকে অগ্নিতে সমর্পণ করে ঐ পাঁচটি বস্তুকে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়।
শবদাহ সম্পর্কে অথর্ব বেদে বলা হয়েছে—
ইমৌ যুনিজিম তে বহনী অসুনীতায় বােঢ়বে।
তাভ্যাং যমস্য সদ্দনং সমিনীশ্চাব গচ্ছতাৎ৷৷
হে জীব, তােমার মৃতদেহের সদগতির জন্য তা অগ্নিতে সমর্পণ করছি।
এর দ্বারা তুমি যমদেবের কাছে নীত হবে ও পরলােকে শ্রেষ্ঠ গতি লাভ করবে।
আরভম্ব জাতবেদস্তেজস্বদ ধরা অস্তু তে।।
শরীরমস্য সং দহাথৈনং ধেহি সুতা লােকে।।
হে অগ্নিদেব, তুমি এই শবকে গ্রহণ করাে। একে আশ্রয় দাও।
তােমার আশ্রয়ে এ তেজস্বী হবে। তুমি এই শবকে জ্বালিয়ে দাও।
এই জীবাত্মাকে সুকৃত লােকে প্রেরণ করাে।
যজুর্বেদে বলা হয়েছে-
বায়ুর নিলমমৃত মথেদং ভস্মান্তং শরীর।
ওঁ ক্ৰততা স্মর! ক্লিবে স্মর কৃতং স্মর।।
হে কর্মশীল জীব, দেহ থেকে তােমার আত্মা পৃথক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওঁ নাম স্মরণ কর। ঈশ্বরকে স্মরণ কর। তােমার কৃতকর্ম স্মরণ কর। এই শরীর ভস্ম হওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। একে ভস্ম করা হবে।
অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময় শবের মাথার খুলিকে ভেঙে দেওয়া হয়, যাতে সহজেই জ্বলে পুড়ে সেটা ভস্ম হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে কপালক্রিয়া বলে। প্রচলিত আছে যে কপাল ভেঙে দিলে আত্মা পূর্বদেহ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায় এবং নবজন্মগ্রহণের ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। আবার যেহেতু মস্তিষ্কে
এগার বাস তাই এইভাবে তাকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
0 Comments